পূর্ণলক্ষ্মীর একাল সেকাল (ত্রয়োদশ পর্ব)


Image

শোভনার বিয়ে

–“বুড়ি, জামাই কি ঠিক করেছেন বড় মেয়ের বিয়ে দেবেন না?”

পাশের ঘরের ভেজানো দরজার পিছনে ষোড়শীবালার শান্ত গলা। মা এলে এ এক বিপদ পূর্ণলক্ষ্মীর। কিছুতেই তিনি জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলবেন না…সামনে বেরোবেনও না।পূর্ণলক্ষ্মীকে মধ্যস্থ মেনে দুই কর্ত্তৃপক্ষর ভাব বিনিময় চলবে।লজ্জা না।লোকাচার।প্রায় সমবয়সী জামাইয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে বাধতো ষোড়শীবালার। কিছু সংস্কার থাকে অবয়বহীন।অদৃশ্য থেকে তর্জনী তুলে ধরে।

তা সে যাই হোক, সেদিনের প্রশ্নটি ঠিক দুটি বেশী লুচি খাওয়ার আদেশ ছিলোনা। এই গলা অন্যরকম।  প্লেটে চা ঢেলে ফুরুৎ ফুরুৎ করে খেলেও ষোড়শীবালার গলায় এরকম ঝড়ের আভাস পেতো নাতি নাতনীরা।এ গলা অবিশ্যি তার চেয়েও ভয়ংকর।
–“আর আমার আবার বরাবরই ফ্যাঁচফ্যাঁচানি রোগ।যেইনা মা ওকথাবলেছেন, আমিও খুব একচোট কেঁদে নিয়ে বলে বসলুম, “এই বৈশাখে শোভনার বিয়েনা হলে আমি অন্নজল ত্যাগ করবো”।তোর দাদু খুব খানিক রাগারাগি করে একেবারে চুপ করে গেলেন। সেই প্রথম বোধহয় শোভনার বয়স উনি হিসেব করলেন।আমিতো একে ওকে তাকে বলে বেড়াচ্ছি…এরমধ্যে একদিন উনি সন্ধেবলা সিঁড়ি দিয়ে বলতে বলতে উঠছেন: “বীরেন লাহিড়ীর মেয়ের বিয়ে ঠিক হতে বেশীদিন লাগেনা।কথা পাকা হয়েগেছে।পাত্র পক্ষ এর মধ্যে এসে একদিন শোভনার সঙ্গে একটু আলাপ করে যাবেন।কাল পণ্ডিতমশাইকে খবর পাঠিয়ে দিন স্থির করবে।ওনারা বেশী দেরী করতে চাননা”।
–ওমা সেকিকথা !

শোভনার মামাশ্বশুর ছিলেন বীরেন্দ্রনাথের পুরোনো মক্কেল।ছেলের মা নেই।সৎমা মানুষটি খারাপ ন’ন, তবে উঠে পড়ে সৎ ছেলের জন্যে কিছু করে ফেলবেন সেরকমও ন’ন।তাছাড়া মা-টি আবার খুবই অল্পবয়সী। আর বাবা চিরকালের উদাসীন।তাই নীহাররঞ্জনের বিয়ের দায়িত্ব তার মেজমামার।মেয়ে দেখার প্রশ্নই নেই! লাহিড়ীমশাইয়ের মেয়ে বলে কথা।ছেলে বেঙ্গল সিভিলসার্ভিসে আছে।পুরোনো বংশ।আর রাজপুত্রের মত চেহারা।যে ছবিখানা বীরেন্দ্রনাথের জোব্বার পকেট থেকেবেরিয়েছিলো , তা দেখে পূর্ণলক্ষ্মী গ’লে জল।কিন্তু ঐযে, মা বলেছিলেন ওনার বোধ কম? যেকথা পূর্ণলক্ষ্মীর মাথাতেও আসেনি, সেকথাটি ষোড়শীবালা ভোলেননি।তাই আবার পাশের ঘর থেকে কামান গর্জন শোনা গেলো: “বুড়ি, জামাইকে জিগেস করো তাঁদের পদবীটি কি?”

–“তোর দাদুর মুখ দেখে মনে হ’ল মাথায় বাজ পড়েছে।বেমালুম ভুলেছেন মুখ দেখে পরিস্কার বুঝলুম।তা ভাঙ্গেন তবু মচকাননা। বীরদর্পে বললেন “পট্টনায়ক”। আর যায় কোথায়…মা তাঁর সেই বরফঢালা গলায় বললেন. ‘বুড়ি, জামাইকে বলো পট্টনায়করা উড়িষ্যার কায়স্থ’।ওনার চোখমুখ তখন দেখার মত।পাশের ঘরের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললেন‘কিন্তু মাতুল বংশ তো সান্যাল’ ”!

প্রত্যুত্তরে আর একদাগ তোপ চালিয়েছিলেন ষোড়শীবালা।লক্ষ্য মেয়ে না জামাই, তা অবিশ্যি পরিস্কার হয়নি: “যেদিকটিই না দেখবো সেদিকটিই যে পন্ড হবে এ আমি গোড়া থেকেই জানতুম।  সান্যালদের ভাগ্নে যে কিভাবে পট্টনায়ক হয় সে তো আমি ভেবে পাইনে…”।

পট্টনায়ক নয়। পত্রনবীশ। উপাধি। পদবী মৈত্র।আদিপুরুষ  মাধবানন্দ মৈত্র নদীয়ার মানুষ।তস্যপুত্র হরিহর তর্কবাচস্পতি।তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র উদয়নারায়ণ ছিলেন এক কালাপাহাড়।কুলধর্ম ত্যাগ করে ফার্সী শিখেছিলেন বলে হরিহর তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করেন।উদয়নারায়ণ সোজা পৌঁছে যান মুর্শিদাবাদ।বাংলা বিহার উড়িষ্যার তখ্তে তখন মুর্শিদকুলি খান।উদয়নারায়ণ তাঁরই দরবারে অনুবাদকের কাজ পান।  বাংলা আর সংস্কৃত থেকে ফার্শিতে পোশাকি তর্জমা।তারপর নবাবের নাজিম।তাঁরই দেওয়া উপাধি আর সেইসূত্রেই পরবর্তীকালে  ঢাকায় নবাবি দপ্তরে স্থান বদল আর ময়মনসিংহে কিছু তালুকমুলুক।  কালগতিকে বাঙাল বটে, কিন্তু আদতে ন’দের লোক।সব জেরা করে জেনে নিয়েছিলেন বীরেন্দ্রনাথ।পূর্ণলক্ষ্মীর কাছে  বৃত্তান্ত শুনে ষোড়শীবালা শান্ত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু ভুবনমোহিনী বলেছিলেন: “ আ মরণ…কোথ্থেকে এক পিরিলী বামুন ধরি আনিছে!”

শোভনারবিয়ে

সম্বদ্ধ  হইল  ঠিক  করি  লগ্ন  স্থির

ভালদিনহইলঠিকপরেবিবাহের।।

দক্ষিণের হাওয়া বয় কুকিল করে রা

আমের বউলে বস্যা গুঞ্জে ভ্রমরা।।

নয়াপাতা  যতগাছে নয়ালতা ঘিরে

ভাল দিন ঠিক হইল শঙ্করের বরে।।

পানখিল দিয়া করে বিয়ার আয়োজন।।

সেই ত দিনে হইব বিয়া সর্ব্বসুলক্ষণ

                     (ময়মনসিংহগীতিকা)

বৈশাখেই বিয়ে হয়েছিলো শোভনার।তবে বড় মেয়ের বিয়েতে যতটা ঘটা হওয়া উচিৎ ছিলো তা হয়নি।১৯৪৫ খুব ছছল বছল সময় নয়।যুদ্ধের পরে সবই আক্রা।তবুও তারি মধ্যে যতদূর সাধ্য করেছিলেন বীরেন্দ্রনাথ। বৈঠকখানার বারান্দায় সানাই বসেছিলো। তিনতলার ছাদে ভিয়েন বসিয়ে আগে দিন থেকে তৈয়ের হয়েছিলো গাওয়া ঘি আর ক্ষীর দিয়ে বাঁধা দানাদার, ক্ষীরের লেডিকেনি আর রসগোল্লা। শেষেরটি বিশেষভাবে হয়েছিলো বাড়ীর বিধবাদের কথা মনে রেখে। তাঁদের ভাজা মিষ্টি বারণ। এছাড়া ভীমনাগের দই, আর আম, আর কালাচাঁদের প্রাণহরা।

— “এতো শুধু মিষ্টি। এছাড়া ছিলো ছোলা দিয়ে পালং শাকের ঘন্ট, বেগুনের চাটনি, এঁচোড়ের কালিয়া,  ছানার চপ, নারকোলের আর মাছের মাথার ডাল। রুই- কালিয়া, পার্শে পাতুরি, ভেটকি ফ্রাই, লুচি, মাংস, পোলাও, আমসত্ত্বের চাটনি আর পাঁপড়”।

শুধু গয়নাতেই যা একটু টানাটানি ছিলো। পূর্ণলক্ষ্মীর গয়নার বাক্স তো খালি কবেই। দিদিমা দিয়েছিলেন গিনির নেকলেস। ঠাকুমা দিয়েছিলেন পাটিহার।মামাবড়ি তত্ত্ব করেছিলো বাউটি দিয়ে। বাকি চুড়ি, কানবালা আর একজোড়া ডায়মন্ড কাটা বালা, আটপৌরে গলার হার পূর্ণলক্ষ্মীকেই দিতে হয়েছিলো। শোভনা টিকলি নেয়নি। বেনারসীও পরেনি। তার ফরমায়েশে বহরমপুর থেকে এসেছিলো লাল জরি পাড় ঘি রং এর খাঁটি কড়িয়াল। সারা জমিতে হালকা জরির বুটি। সঙ্গে লাল ভেলভেটের পুঁতির কাজ করা ব্লাউজ, মুসলমান দর্জিকে দিয়ে বানানো।

*****

ময়মনসিংহ বড় দূর। শেয়ালদা থেকে ট্রেনে ঢাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে ময়মনসিংহ শহর। আসল গোল বাধলো সেখানে পৌঁছে। সেখান থেকে মোটরে নেত্রকোণা, শোভনার  সোনা খুড়শ্বশুরের বাড়ি। সেখানে একবেলা জিরিয়ে পালকি করে বাড়রি গ্রাম। পত্রনবীশদের আদি নিবাস।  পালকিতে উঠেই প্রথম ভয় পেয়েছিলো শোভনা। অচেনা দেশ, অপরিচিত ভাষা। শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে বাবার ওপর অভিমানে কেঁদে ফেলেছিলো । একটা বিশাল মাটির উঠোনের চারদিক বেড় দিয়ে টিনের চালের অনেকগুলো মাটির বাড়ি। পরে জেনেছিলেন বাড়ি না, এক একখানি ঘর। এক প্রান্তে টানা বারান্দার রান্নাবাড়ি। তার পাশ দিয়ে গিয়ে বাড়ির তিনখানা পুকুর। একটি বাড়ির কর্তাদের জন্য খোলামেলা। একটি ছেলেপিলেদের। আর একখানি  বড় বড় গাছের ছায়ার আড়ালে ‘বৌ পুকুর’। মেয়েদের জন্যে। কি ভাগ্যি শোভনার, বড়জা পাবনা শহরের মেয়ে। সাঁতার জানেনা। তাই বাড়িতে আগে থেকেই একটি স্নানের ঘর বানানো হয়েছিলো। মেজবৌ সেই ঘরে স্নানের অনুমতি পেলো।

শাশুড়িরা মানুষ ভালো, কিন্তু তাঁদের ওঠাবসা  চলন বলন সবই অন্যরকম লাগে শোভনার। আর কথা তো সে প্রায় কিছুই বোঝেনা ! বাংলার গ্রামও সেই প্রথম। দুপুরবেলা বউভাত হয়েছিলো শোভনার। তখনই জেনেছিলো কি বিশাল একটি পরিবারে এসে পড়েছে।পত্রনবীশরা চার শরিক: দালাইন্যা বাড়ি, পূবের বাড়ি, মইধ্যের বাড়ি আর তার নিজের শ্বশুরকূল, নয়াবাড়ি। সারা গ্রাম জুড়েই পত্রনবীশরা। বাকি সব প্রজা আর কর্মচারি। কিছু হিন্দু, বাকি মুসলমান।  প্রথমে এসেছিলেন কর্তারা। তাঁরা এসেছিলেন ছড়ি হাতে। মাথায় ছাতা ধরে জলের বদনা নিয়ে পেছন পেছন কোনো প্রজা।

তারপর পাল্কিতে মস্ত মস্ত ফাঁদি নথ পরা, পান-মুখে জ্ঞাতি শাশুড়িরা আর তাঁদের বউরা।। গাঁ-ঝ্যাঁটানো নেমন্তন্ন কাকে বলে সেই প্রথম বুঝেছিলেন শোভনা। ডালই হয়েছিলো চার রকমের: তিতার ডাইল, সব্জীর ডাইল, টকের ডাইল আর মাছের ডাইল। দই নয়। মিষ্টির পাতে ছানা ক্ষীর আম কাঁঠালের ফলার। সঙ্গে ক্ষীরের আর নারকোলের ছাঁচে ফেলা সন্দেশ।

সে প্রথম বাঙালদেশের বিখ্যাত উলুধ্বনি শুনেছিলো সে। মৈমনসিংহের ভাষায় ‘জুকার’: জুকার দিয়াম এই পাড়া, জুকার যাইবো হেই পাড়া’ । এক এক জন শাশুড়ি উঠোনে এসে নামছেন জুকার দিতে দিতে।  তাদের অভ্যর্থনাও হচ্ছে জুকার দিয়ে। আর শুনেছিলো মৈমনসিংহের বিখ্যাত বিয়ের গান। অবিরাম। একদল মেয়ে খেতে উঠলে আর একদল তাদের জায়গা নেয়। গান থামেনা। হাতে তালি দিয়ে একটা অদ্ভুত টানা সুরে শাশুড়ী আর বড় ননদরা গেয়ে চলেছেন চন্দ্রাবতী জয়চাঁদের গাথা :

বাড়ীর আগে ফুট্যা আছে মালতী-বকুল।

আঞ্চল ভরিয়া তুলব তোমার মালার ফুল।।

বাড়ীর আগে ফুট্যা রইছে রক্তজবা-সারি।

তোমারে করিব পূজা প্রাণে আশা করি।।

 

বাড়ীর আগে ফুট্যা রইছে মল্লিকা-মালতী।

জন্মে জন্মে পাই যেন তোমার মতন পতি।।

বাড়ীর আগে ফুট্যা রইছে কেতকী-দুস্তর।

কি জানি লেখ্যাছে বিধি কপালে আমার।।

 

এইরূপে কান্দে কন্যা নিরালা বসিয়া।

মন দিয়া শুন কথা চন্দ্রাবতীর বিয়া।।

–“দু সপ্তাহ পরে অষ্টমঙ্গলায় এসে মেয়ের কি কান্না…শাশুড়িরা কথা কইলে সে বোঝেনা, সেই নিয়ে নাকি হাসাহাসি ব্যাপার। বলে কিনা. ‘নয়াখুড়িমা ঠিকই জানতেন আমি কিছু বুঝিনা, ইচ্ছে করে বললেন ‘হাসন ডি লইয়া আইয়ো সে?’  তবে সেও লাহিড়ী বাড়ীর মেয়ে। ঠিক বুঝেছিলো বেলা গড়িয়ে আসছে এইসময়ে গৃহস্থবাড়ি একবার ঝাঁট পড়ে। ঝাঁটা হাতে হাজির হয়েছিলো।শাশুড়িরা অবাক। নিজেদের মধ্যে নাকি বলাবলি করেছিলেন, ‘তয় নাকি বউ আমরার ভাষা বুঝে না?’ …আরও কত অভিযোগ তার: রান্নায় বড় ঝাল। রাত্রিবেলা টিনের চালে নানারকম শব্দ হয়…আরও কতশত। খুব বকেছিলুম তাকে। বলেছিলুম. “তোমাদের বাড়ি কোন রাজপ্রাসাদ ছিলো, শুনি? তোমার ঠাকুমা আমাকে গুগলির ঝোল খাইয়েছিলেন, জানো? সোনামুখ করে খেয়েছিলুম। দেখো, এমন কিছু কোরোনা যাতে তোমার বাবার অমর্যাদা হয়। তাছাড়া তুমি তো তাদের সাথে থাকবে না?”
মানিয়ে নিয়েছিলেন শোভনা, পত্রনবীশ বাড়িতে। ঠিক যেমন তাঁর গ্রাম্য শ্বশুরবাড়ি মেনে নিয়েছিলো বাঁ মণিবন্ধে ঘড়ি বাঁধা, হালকা সিঁদুর ছোঁয়ানো খোঁপার ওপর আলগোছে ঘোমটা দেওয়া মেজবৌমাকে। শোভনা নিজের সংসার পেতেছিলেন শেরপুরে, নীহার রঞ্জনের কর্মস্থলে। তবে শোভনার আর অর্গান বাজিয়ে গান গাওয়া হয়নি। নীহার রঞ্জন সাহিত্য পাগল, কিন্তু সঙ্গীতপ্রেমী ন’ন।  তেলরঙে আঁকা তার শেষ ছবিটি টাঙানো ছিলো পূর্ণলক্ষ্মীর শোবার ঘরে, দশমহাবিদ্যার ঠিক নীচে।

১৯৪৬ এর শেষে সুদীপ প্রদীপের জন্ম বালীগঞ্জের বাড়িতে। তাদের দেখে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলো তাদের আড়াই বছরের ‘খুকু’মাসি।

ভারি অদ্ভূত সেই বছরটি। খুব শিগ্গিরি “এপার বাংলা ওপার বাংলা মধ্যিখানে চর” হয়ে যাবে। অনেকেই জানতো হয়তো কিন্তু মানতো না।

(ক্রমশঃ)

 

Published by purnachowdhury

I am a person of and for ideas. They let me breathe.

4 thoughts on “পূর্ণলক্ষ্মীর একাল সেকাল (ত্রয়োদশ পর্ব)

  1. আগের কোনো পর্বের প্রসঙ্গেও বলেছিলাম, আবারও বলছি – ছড়াগুলোও বিস্ময়কর ! অন্যান্য ডিটেলও উল্লেখযোগ্য, তবে ছড়াগুলো অদ্ভুতভাবে ইম্প্রেস করছে ।

Leave a comment